আইস্ক্রিম আবিষ্কার এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, পড়ুন বিস্তারিত

Smart Update24, By Syed Mosharaf Hossain


আইসক্রিমের আবিষ্কার নিয়ে যে গল্পটা শোনা যায়, সেটা বেশ কৌতূহলপ্রদ। মোঙ্গল ঘোড়সওয়ারেরা শীতকালে গোবি মরুভূমি অতিক্রম করার সময়ই নাকি পাকেচক্রে করে ফেলেছিল এই আবিষ্কার কীভাবে ? আসলে, ঘোড়সওয়ারেরা পশুর অন্ত্র শুকিয়ে দীর্ঘ নলের মতো জিনিসটায় ক্রিমযুক্ত দুধ ভরে রাখত যাতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতেও চলকে পড়ে নষ্ট না হয়। ছুটন্ত ঘোড়ার ঝাঁকুনির কারণে দুধে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হত প্রচুর বাতাস। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় সেই দুধ জমেই নাকি তৈরি হয়েছিল স্বাদু আইসক্রিম। অবশ্য এই কাহিনির সত্যাসত্য নিরূপণ করার আজ আর কোনো উপায়ই নেই।


আইসক্রিমের বানাতে লাগে জল, দুধের প্রোটিন ফ্যাট, চিনি আর ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি গোছের কোনওফ্লেভারিং এজেন্ট উপাদানগুলোকে ঠিকঠাক পরিমাণে মিশিয়ে ফ্রিজারে রাখলেই কিন্ত আইসক্রিম তৈরি হবে না, মিলবে কুলপি ধরনের কিছু একটা কচকচে গোলমেলে বস্তু ! আইসক্রিম বানানোর রহস্য তাহলে কী ? আসলে, একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাদ পড়েছে বলেই আইসক্রিমের বদলে মিলেছে কুলপি ! মজার কথা, এই জরুরি উপাদান কিন্তু পাওয়া যায় বিলকুল নিখরচায়, কেননা সেটা হচ্ছে বাতাস ! আইসক্রিম বানাতে নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ বাযুসংযুক্তিকরণ (aeration) অতীব প্রয়োজনীয় কাজ।


নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, কিছু আইসক্রিম মুখে দিলে কণাগুলোকে অত্যন্ত মিহি বলে বোধ হয় আবার কিছু আইসক্রিমের ক্ষেত্রে অনুভব করা যায় কিঞ্চিৎ দানা দানা জিনিস। আইসক্রিমের ভেতরে থাকা বরফের কুচি বাতাসের বুদবুদের সাইজের হেরফেরই এর কারণ আইসক্রিম তৈরির যন্ত্রের আগমন হয়েছিল উনিশ শতকে। একটি চোঙআকৃতির (cylindrical) ব্যারেলে উপাদানগুলোকে পুরে দেওয়া হত। বরফ নুনেরফ্রিজিং মিক্সচারব্যারেলের বাইরে নীচে রাখা হত। একটি হ্যান্ডেলের সাহায্যে উপাদানগুলোকে ধীরে ধীরে ঘোরানো হত।


নীতিগতভাবে আধুনিক আইসক্রিম কারখানাতেও একই পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে থাকে। আধুনিক যন্ত্রের মূল অংশ একটি শীতলীকৃত (refrigerated) ব্যারেল যেটির ভেতরে থাকে একটি ঘূর্ণমানড্যাসার’ (dasher) ড্যাসারে লাগানো থাকে অনেকগুলোস্ক্রেপার ব্লেড প্রায় 5 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার আইসক্রিম মিশ্রণকে পাম্প করে ব্যারেলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ব্যারেলটা খুব শীতল থাকায় মিশ্রণ এটার সংস্পর্শে আসামাত্র বরফকুচি গঠিত হয়। ড্যাসারের ঘূর্ণনশীল স্ক্রেপার ব্লেড বরফের কুচিগুলোকে চেঁচে মিশ্রণের ভেতরে পাঠানোয় মিশ্রণের উষ্ণতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। মিশ্রণ জমতে শুরু করে এবং একই সাথে ভেতরে বাতাস প্রবিষ্ট করানো হতে থাকে। বাতাসের বড় বুদবুদগুলো ঘূর্ণমান ব্লেডের পাল্লায় পড়ে ভেঙ্গে ছোটো ছোটো হয়ে মিশ্রণের সর্বত্র সমভাবে পড়ে ছড়িয়ে দুধের ফ্যাট আর প্রোটিনের কণা বুদবুদের উপরিতলে শোষিত হয়ে সেগুলিকে থিতু (stabilize) হতে সাহায্য করে। এভাবেই তৈরি হয় আইসক্রিম।


আশ্চর্যের বিষয়, আয়তনের হিসেবে আইসক্রিমের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই কিন্তু স্রেফ বাতাস ! আইসক্রিমকে চামচে দিয়ে সহজেই তোলা সম্ভব এই বাতাসের উপস্থিতির কারণেই !


Yours Smart Update24 Team
Yours Smart Update24 Teamhttps://sdsmartupdate24.in
বাংলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে Smart Update24।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles