ভারতের ডিজিটাল কোহিনুর, এক বঙ্গসন্তান বিজ্ঞানী,

এখন সকলের হাতেই কম্পিউটার ,  কে আবিষ্কার করেছেন জিজ্ঞেস করলে মেধাবী ছাত্র ঝটপট উত্তর দেবে, ‘চার্লস ব্যাবেজ’.

কিন্তু যদি প্রশ্ন হয় ভারতে কে এটি প্রথম তৈরি করেন ? আপনি আমি কেউ জানি না. “সমরেন্দ্র কুমার মিত্র”, এক বঙ্গ সন্তান বিজ্ঞানীর নাম।

১৯৩২ সালে বরাহনগরে ISI বা Indian Statistical Institute প্রতিষ্ঠার পর বৃটিশ শাসকরা চাপ দিতে লাগলো, দুর্ভিক্ষের পর বাংলায় চাষযোগ্য ধান ও পাটজমির একটা পরিসংখ্যান তৈরি করে দিতে. আর এই কাজ করতে গিয়েই ISI এর স্থাপক বিজ্ঞানী প্রশান্ত মহলানবীশ প্রথম দেশে একটি যন্ত্রগণকের অভাব অনুভব করলেন .  দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নানা বাধা, সরকারি বিধিনিষেধ ও বিদেশী মুদ্রার অর্থাভাব সত্বেও প্রফেসর মহলানবীশ ISI তে একটি ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করলেন ও দুই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, ১)সমরেন্দ্র কুমার মিত্রকে এবং ২)সৌমেন্দ্র মোহন বোসকে নিয়োগ করলেন ১৯৫০ সালে ।

এই দুই উদ্যোগী বঙ্গসন্তান তখন ঘুরতেন শহরে কালোয়ারদের ডেরায়, যেখানে পাওয়া যেতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাতিল হওয়া মালপত্র। সেখান থেকে জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে তাঁরা ল্যাবে বানিয়ে নিতেন নিজেদের প্রয়োজন মাফিক সরঞ্জাম, যেমন ম্যাগনেটিক টেপ বা ফ্লপি ডিস্কের জায়গায় ব্যাবহার করতেন শক্ত কাগজে তৈরি পাঞ্চ কার্ড, এই সব!

এখানেই ১৯৫৩ সালে সমরেন্দ্র কুমার মিত্র তৈরি করেন দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতের প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। এটা ছিল আ্যনালগ টাইপ এবং দশ ভ্যারিয়েবল অব্দি লিনিয়ার ইকুয়েশন সম্পন্ন করা যেতো। সমরেন্দ্র মিত্র কে সেই হিসেবে ভারতের কম্পিউটারের জনক বললে অত্যুক্তি হয়না! সেই শুরু, এরপর ১৯৬৩ সালে তাঁরই পরিচালনায় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ওখানে তৈরি হয় দেশের প্রথম হাই স্পিড ডিজিট্যাল কম্পিউটার ISIJU-1.

সমরেন্দ্র মিত্র এসেছিলেন এক অত্যন্ত শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে। বাবা স্যার রূপেন মিত্র ছিলেন স্নাতকোত্তর স্তরে আইন ও অংকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত। দেশ স্বাধীন হবার সময়ে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।

বউবাজার স্কুল থেকে পাশ করে সমরেন্দ্র ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৩৭ সালে তিনি রসায়নে M.Sc এবং ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ থেকে ফলিত গণিতে M.Sc করেন। স্নাতক স্তরে দারুন রেজাল্ট করার জন্য পান কানিংহাম স্মৃতি পুরস্কার। মেঘনাদ সাহার অধীনে গবেষণা করতেন, কিন্তু মাঝপথে অধ্যাপক সাহার মৃত্যুতে বন্ধ করে দেন। গবেষক হিসেবে যোগ দেন CSIR এ।

১৯৫০ সালে আচার্য মহলানবীশের আহ্বানে যোগ দেন ISI তে ।

শুধু অঙ্ক বা ফিজিক্স নয়, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পোল্ট্রি সায়েন্স এমনকি সাহিত্য ও দর্শনশাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্য ছিল এই বঙ্গসন্তানের। দেশ বিদেশ থেকে পেয়েছেন অজস্র সম্মান। স্বাধীন ভারতের বহু রিসার্চ ও ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৪৯-৫০ সালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হাই স্পীড কম্পিউটার প্রজেক্টে কাজ করার জন্য পান UNESCO থেকে বিশেষ স্কলারশিপ। কাজ করেছেন বিখ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠ জনদের মধ্যে ছিলেন আইনস্টাইন ও উলফগ্যাঙ পাওলির মতো বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীরা। তাঁদের সাথে ভাগ নিয়েছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন পরমাণু বিজ্ঞানী নীলস বোরের বহু আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন তিনি। সেদেশের পত্র পত্রিকায় এসব আলোচনার কথা উল্লেখ থাকলেও এপোড়া দেশে তিনি হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অন্তরালে। ভারতের ডিজিটাল কোহিনুরের প্রথম কম্পিউটার জনক , কোন জায়গাতেই আজ আর বিশেষ কেউ তাঁর কথা স্মরণ করেন না।

২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে একরকম নীরবেই দুনিয়া ছাড়েন ভারতে কম্পিউটারের জনক সমরেন্দ্র কুমার মিত্র.  বেঁচে থাকলে এই মার্চ মাসে শতবর্ষে পা রাখতেন ভারতের ডিজিটাল কোহিনুর !!

 

Syed Mosharaf Hossain
Syed Mosharaf Hossain
Hi, I am Syed Mosharaf Hossain, popularly known as Deep in my friends’ circle. I am a writer, author ,educationist and an researcher . I enjoy writing things that are on popular science, applied mathematics, environment, history, invention news , modern technology culture and society in Bengali in order to popularize science among readers in the regional language. Gold medalist, at Govt. of West Bengal district and state level Student-Youth science research competition 2015 & Inventor of women safety Shoe, Study- Engineering student

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles