যমজ সন্তান কী? কীভাবে এই যমজ সন্তানের জন্ম হয়? চাইলেই কি কেউ যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পারে?
Twin childbirth : বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় 16 লক্ষ যমজ শিশুর জন্ম হয় এবং প্রতি 42 টি শিশুর মধ্যে একজন যমজ হয়। 1980 সালের পর থেকে যমজ সন্তান জন্মানোর হার প্রায় 30% বেড়ে গেছে। প্রতি 1000 জন নতুন জন্মানো শিশুর মধ্যে 9 থেকে 12 জন শিশু যমজ (The Week, May- 02, 2021)। আমাদের দেশে প্রতি 1000 জনের মধ্যে 4 জন মহিলা যমজ সন্তানের জন্ম দেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন গত দুই দশকে যমজ সন্তানের হার দশগুণ বেড়েছে (Twin childbirth) ।
আসুন যমজ সন্তান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন আজ আমরা আলোচনা করি। এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি দিয়ে সমাজে প্রচলিত যমজ সন্তান জনিত কিছু ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটাই।
1) যমজ সন্তান কী?
2) কীভাবে এই যমজ সন্তানের জন্ম হয়?
3) চাইলেই কি কেউ যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পারে?
4) যমজ ফল খেলে কি সত্যিই যমজ সন্তান হয়?
5) যমজ সন্তানের কি আলাদা আলাদা বাবা হতে পারে?
প্রত্যেক নারী তার গর্ভে একবারে একটি মাত্র সন্তান ধারণ করেন, এটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যখন দুই বা ততোধিক সন্তান ধারণ করেন তখনই তাদের যমজ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব একই সময়ে একাধিক সন্তান ধারণ করা? অবশ্যই এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
নারীর ডিম্বাশয় হতে প্রতি মাসে একটি করে পরিপক্ক ডিম্বাণু জরায়ুতে আসে। এই ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণু মিলে যে জাইগোট তৈরি হয়, তার থেকেই সন্তান জন্ম নিয়ে থাকে। এটা তো কেবল মাত্র একটি সন্তান জন্মানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা কিনা মোটামুটি সবারই জানা। তাহলে যমজ সন্তান কীভাবে সৃষ্টি হয়?
Read More : Noadar Dhal station :কী অদ্ভুত স্টেশনের নাম “নোয়াদার ঢাল” নামের পেছনের গল্প শুনুন আজ
প্রধানত দুইভাবে এটা হতে পারে –
১। মনোজাইগোটিক বা অভিন্ন বা identical twins.
২। ডাইজাইগোটিক বা ভিন্ন বা non-identical twins.
-
মনোজাইগোটিক বা অভিন্ন বা identical twins:
এক্ষেত্রে দুটি ডিম্বাশয়ের একটি হতে একটি ডিম্বাণু নির্গত হয় ও শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে একটি জাইগোট গঠন করে। কিন্তু তারপর জটিল বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরে তা দুটি কোষে বিভক্ত হয়, এবং কোষদুটি আলাদা আলাদাভাবে বিকশিত হতে থাকে। এরই ফলে যমজ সন্তান জন্মলাভ করে। এভাবে দুই-এর অধিক যমজ সন্তানও হতে পারে। একটি জাইগোট বিভক্ত হয়েই এই পদ্ধতিতে যমজ সন্তান হয় বলে এদের শরীরগঠনগত বৈশিষ্ট্য প্রায় অভিন্ন হয়ে থাকে। এদের পরম আত্মীয়দের পক্ষেও তাদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
-
ডাইজাইগোটিক বা ভিন্ন বা non-identical twins:
একে ফ্র্যাটারনাল টুইন-ও বলা হয়। এক্ষেত্রে নারীর ডিম্বাশয় হতে একটির জায়গায় দুটি ডিম্বাণু নির্গত হয়। এই দুটির প্রতিটি ডিম্বাণু পৃথক পৃথক শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে দুটি জাইগোট উৎপন্ন হয় এবং এর থেকেই তখন যমজ সন্তান জন্মলাভ করে থাকে। এই যমজ সন্তানদের শরীরগঠনগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়। রক্তের গ্রুপ একই রকম হতে পারে, আবার ভিন্নও হতে পারে।
- এছাড়াও আরও দুটি জটিল ধরনের যমজ হতে পারে –
- প্রায় অভিন্ন বা semi–identical twins.
- যুগ্ম বা conjoined twins.
-
প্রায় অভিন্ন বা semi-identical twins:
কখনো কখনো একটি ডিম্বাণু দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। হয় আগে শুক্রাণু দুটি দ্বারা নিষিক্ত হয়ে পরে শুক্রাণুসহ সমান ভাগে জাইগোট বিভক্ত হয়, কিংবা এমনও হয়ে থাকে যে, আগেই একটি ডিম্বাণু দ্বিবিভাজিত হয়ে আলাদা দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। এই সেমি আইডেন্টিক্যাল টুইন-দের মায়ের থেকে প্রাপ্ত জিনের বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়, কিন্তু দুটি ভিন্ন শুক্রাণু লাভের কারণে বাবার থেকে প্রাপ্ত জিনের বৈশিষ্ট্য যমজ সন্তানদের মধ্যে ভিন্ন হয়।
-
যুগ্ম বা conjoined twins:
যমজ সন্তান প্রতিটি মানুষের কাছে যেমন আনন্দ-উদ্বেগের কারণ হয়, তেমনি যুগ্ম যমজ সন্তানেরা সীমাহীন কষ্টের কারণ হতে পারে। এরা মনোজাইগোটিক টাইপ হলেও জন্ম থেকেই এই যমজেরা একে অপরের সাথে যুগ্মভাবে থাকে। জাইগোট এক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হতে গিয়েও হতে পারে না।
কিছু অঙ্গ জোড়া লেগে থাকে। এদের সংখ্যা খুবই কম, পুরো পৃথিবীর জমজ মানুষের মাত্র ৩% । কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই যুগ্ম যমজ সন্তানদের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভিন্ন অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পৃথক করে সফলও হয়েছে। তবে তার দৃষ্টান্ত খুবই কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রপচারের সময় মৃত্যু হয়।
- প্রশ্ন: কেউ চাইলেই যমজ সন্তানের জনক-জননী হতে পারে কি (Twin childbirth) ?
উত্তর: না। তবে বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে যমজ সন্তান হবার পেছনে কতগুলো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, যেসব মহিলা ফলিক অ্যাসিড বেশি গ্রহণ করে থাকেন, তাদের যমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০% বেশি।
এছাড়াও যদি মায়ের বংশে আগে কেউ যমজ সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে তবে তার যমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। যেসব নারীর ওজন ও উচ্চতায় বেশি তাদেরও যমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরেও হরমোনজনিত কারণে, প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসের কারণে যমজ সন্তান হয়ে থাকে।
- প্রশ্ন: যমজ ফল খেলে কি সত্যিই যমজ সন্তান হয়?
উত্তর: না। যমজ বা পরস্পরের সঙ্গে জোড়া ফল খেলে যমজ সন্তান হয় না। এটি কুসংস্কার।
- প্রশ্ন: যমজ সন্তানের কি আলাদা আলাদা বাবা হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ। যমজ সন্তানেরও আলাদা আলাদা বাবা থাকতে পারেন। যদি কোনও মহিলা এক মাসে দুটি ডিম্বাণু নিষ্ক্রমণ করেন এবং এই দুটি ডিম্বাণু যদি দুজন আলাদা পুরুষের দ্বারা নিষিক্ত হয়, তাহলে ওই মহিলা ভিন্ন বাবার যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। তবে এটা অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা।